সর্বশেষ
Home » অন্যান্য » পাওনা টাকা চাওয়ায় সিলেটে দুই বান্ধবীর লড়াই ও মামলা

পাওনা টাকা চাওয়ায় সিলেটে দুই বান্ধবীর লড়াই ও মামলা

নাসিমা বেগম ও রোকসানা আক্তার। সিলেটের গোয়াইনঘাটের দুই বান্ধবী। এক সময় তাদের মধ্যে সখ্য ছিল। এখন তারা একে-অপরের প্রতিপক্ষ। একজন আরেকজনকে আসামি করে মামলাও করেছেন। নাসিমার দাবি; পাওনা টাকা চাওয়ার কারণে রোকসানার ভয়ে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। একদফা তার ওপর হামলা করা হয়েছে। অসংখ্যবার হুমকি দেয়া হয়েছে। নাসিমা বেগমের বাড়ি গোয়াইনঘাটের ধর্মগ্রামে। তার স্বামী বেলাল আহমদ ওমান প্রবাসী।

আর রোকসানা আক্তার একই এলাকার পাঁচ সেওতী গ্রামের আব্দুল খালিকের কন্যা। তিনি এক সন্তানের জননী। গত বছরের ১৪ই ফেব্রুয়ারি রোকসানা আক্তার সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালে বান্ধবী নাসিমা ও তার স্বামী ওমান প্রবাসী বেলাল আহমদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। 

ওই মামলায় অভিযোগ করেন; ওমানে বেলালের সঙ্গে বসবাস করতো তার ভাই কামরুল ইসলাম। সে সুবাদে রোকসানার সঙ্গে নাসিমার স্বামী বেলালের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর দেশে এসে বিয়ে করবে জানিয়ে রোকসানার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথাবার্তা ও ছবি আদান-প্রদান করেন। পরবর্তীতে বেলালের সঙ্গে রোকসানার সম্পর্কের অবনতি ঘটলে প্রবাসে থাকা বেলাল তার স্ত্রী নাসিমার সহযোগিতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ছবি প্রদর্শন করে মানহানি ঘটায়। এদিকে সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হলে আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন পিবিআইয়ের কাছে  প্রেরণ করেন। পিবিআইয়ের সাব-ইন্সপেক্টর ঝলক মোহান্ত গত ২৮শে অক্টোবর আদালতে রোকসানার দায়ের করা মামলার তদন্ত রিপোর্ট দেন। পুলিশের তদন্তে ওমান প্রবাসী বেলাল আহমদ অভিযুক্ত হলেও খালাস পান বান্ধবী নাসিমা বেগম। এদিকে গত বছরের ৩রা আগস্ট নাসিমা বেগম বাদী হয়ে সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রোকসানা আক্তারকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন। 

ওই মামলায় নাসিমা অভিযোগ করেছেন- আসামি রোকসানা তার বান্ধবী সম্পর্কে ছিল। স্বামী বেলাল আহমদ প্রবাসে থাকায় তিনি বাড়ি করার জন্য এক বিঘা ভূমি ক্রয় করতে ৫ লাখ টাকা রোকসানার কাছে সঞ্চয় রাখেন। বিভিন্ন সময় বিকাশ, ব্যাংকিং চ্যানেল ও নগদের মাধ্যমে ওই টাকা জমা রাখা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি অঙ্গীকারনামাও করা হয়। গত বছরের মার্চ মাসে ওই টাকা ফেরত চাইলে আসামি রোকসানা কালক্ষেপণ করে। এক পর্যায়ে হুমকিও দেয়। স্বামীর কষ্টার্জিত টাকা হারিয়ে তিনি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বলে জানান। এদিকে- এ মামলা দায়েরের পর নাসিমা বেগম হুমকির ঘটনায় গত বছরের শেষদিকে বান্ধবী রোকসানাকে আসামি করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে আরও একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় রোকসানা সহ তার কয়েকজন স্বজনকেও আসামি করা হয়। পরে নাসিমা তার বান্ধবী রোকসানাকে আসামি করে গত ১৪ই জানুয়ারি সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোয়াইনঘাট আদালতে আরও একটি মামলা করেছেন। 

ওই মামলায় রোকসানা ছাড়াও তার স্বজনদের আসামি করা হয়। ওই মামলায় নাসিমা অভিযোগ করেছেন- ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তিনি রোকসানার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। এ মামলা তুলে নিতে তাকে প্রায় সময় হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় তিনি আদালতে আরও একটি মামলা করেছেন। দুটি মামলা দায়ের করার পর রোকসানা ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১২ই জানুয়ারি বাড়ি থেকে গোয়াইনঘাট যাওয়ার পথে আটলিহাই এলাকায় ভাঙা পুলের কাছে তার সিএনজি অটোরিকশা আটকিয়ে মারধর করে। এতে তিনি আহত হন বলে নাসিমা দাবি করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে মামলাটি পিবিআইয়ের তদন্তে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী নাসিমা বেগম। 

তিনি জানিয়েছেন- বন্ধুত্ব থাকার সময় ওই ৫ লাখ টাকা রোকসানার কাছে সরল বিশ্বাসে সঞ্চয় রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তার নামে জমির রেজিস্ট্রি না করে রোকসানা ওই টাকা দিয়ে নিজের নামে জমি রেজিস্ট্রি করে নেন। বিষয়টি জানার পর তিনি কষ্ট পান। টাকা ফেরত দিতে রোকসানাকে চাপ প্রয়োগ করলে টাকা আত্মসাৎ করতে সাইবার মামলায় তাকে আসামি করে হয়রানি করা হয়। নাসিমা জানান, টাকাও গেল, মামলায় আসামি হলাম। পরে অবশ্য তদন্তে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। এখন টাকা উদ্ধারের জন্য প্রমাণসহ আদালতে মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছি। হুমকি প্রদর্শন ছাড়াও হামলা করা হচ্ছে। তবে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত রোকসানা বেগম। তিনি জানিয়েছেন, যে টাকা দেয়া হয়েছে সেই টাকা তার ভাই বিদেশ থেকে পাঠিয়েছে। এরপর ভাইবোন মিলে জমি কিনেছেন।  বেলাল কিংবা নাসিমার কোনো টাকা তিনি আত্মসাৎ করেননি। 

রোকসানা জানান, ওমানে থাকা বেলাল ও দেশে থাকা তার স্ত্রী মিলে ছবি দিয়ে ইজ্জতহানি ঘটেছে। ওরা মানুষের মান-সম্মান ও জীবন নিয়ে খেলছে। তাকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। তবে সাইবার মামলার ন্যায়বিচার পেতে তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *