সর্বশেষ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদে পদে আর্থিক অনিয়ম পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। রাজধানীতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির বাজেট পর্যালোচনায় ১১টি আর্থিকসহ ২৫টি অনিয়ম মিলেছে। অনিয়মের জেরে ক্ষতি হওয়া অর্থ আদায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি।

ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ওহিদুজ্জামানকে ২য় গ্রেডে বেতন প্রদান করায় জাতীয় বেতন স্কেলের ব্যত্যয় ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই বিষয়ে বলা হয়েছে স্বায়ত্তশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ৩য় গ্রেড বা তদূর্ধ্ব গ্রেডে বেতন পাবেন না।

এতে বলা হয়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও ১০টি মাইক্রোবাস ক্রয় করে। যাতে আর্থিক ক্ষতি হয় ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এছাড়াও প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই ২টি মাইক্রোবাস ও একটি বাস ক্রয় করায় নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। যাতে আর্থিক ক্ষতি ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু যানবাহন ভাড়ায় চালিত। কমিশন কর্তৃক যার আর্থিক ও প্রশাসনিক অনুমোদন নেই। এতে ক্ষতি ২ কোটি ১২ লাখ টাকা।

২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে অসমন্বিত অগ্রিমের পরিমাণ ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এছাড়াও বছর শেষে জুন মাসে অগ্রিম প্রদান করায় নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের আগেই কিছু খাতে মূল বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে ৭০ লাখ টাকার অধিক অর্থ ব্যয় করেছে। অতিরিক্ত হারে দায়িত্ব ভাতা প্রদান করায় ১৯ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বই ভাতার জন্য শিক্ষক প্রতি ৩ হাজার টাকা হারে অর্থ প্রদান করায় ক্ষতি হয়েছে ৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। 

সরকারি নিয়ম ভেঙ্গে ড্রাইভার ও হেলপারের তদারকি ভাতা প্রদান করায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। নিয়ম না মেনে শিক্ষকদের বিভিন্ন পরীক্ষার ফি প্রদান করায় ক্ষতি ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। প্রশিক্ষণ ভাতার নীতিমালার বাইরে প্রশিক্ষণকালীন ৬০০ টাকা হারে দৈনিক মজুরি বিল প্রদান করায় ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার টাকা। 

আর্থিক ক্ষতির বাইরে ১৪টি আইন ব্যত্যয়ের কথা উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এক খাতের বাজেট অন্যখাতে স্থানান্তর করা বা সমন্বয় করা হয়েছে। নিয়ম না থাকার পরও চুক্তিভিত্তিক ড্রাইভার, বাস হেল্পার নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়োগকৃত জনবলের পুলিশ  ভেরিফিকেশন করা হয়নি। নিয়ম না মেনে শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম নেই। পে-স্ল্লিপ তৈরি করা হয়নি সেইসঙ্গে পে-স্লিপে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষর ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগানো হয়নি। অধিকাল ভাতার হার সরকারি হারের থেকে অধিক। ভাইস চ্যান্সেলর ও রেজিস্ট্রার দপ্তর সেইসঙ্গে ব্যক্তিগত শাখায় কর্মকর্তাগণকে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে সম্মানী প্রদান করা হয়। মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়ন নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মীকরণ করা হয়নি। অনুষ্ঠান উৎসবাদি খাত থেকে জাতীয় দিবস ব্যতিত বিভিন্ন দিবসে অতিরিক্ত ব্যয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট সেল নেই। পিআরএল গমনের পূর্বে রেজিস্ট্রার দপ্তর হতে পেনশনারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক পাওনাদি ও দপ্তরের অন্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিকট হতে ব্যক্তিগত পাওনাদির বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হয় না। পেনশনারগণের পেনশন বই প্রণয়ন করা হয়নি এবং বাৎসরিক হাজিরা গ্রহণ করা হয়নি। সিনিয়র ড্রাইভার, সিনিয়র গার্ড পদ অর্গানোগ্রামে না থাকা সত্ত্বেও আপগ্রেডেশন প্রদান করায় নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইউজিসি বাজেট পর্যালোচনা দল কর্তৃক চলতি বছরের ১৭ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট পর্যালোচনাকালীন সময় এসব আর্থিক অনিয়ম ও পর্যবেক্ষণসমূহ দিয়েছে ইউজিসি।

অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী বলেন, বিষয়গুলো অভিযোগে এসেছে এগুলো ম্যানেজেবল। রেজিস্ট্রার স্যারের এপয়নমেন্ট বিষয়ে বলা হয়েছে। তিনিতো আগে থেকেই পেয়ে আসছেন। এটার সমাধানটা খুবই সহজ। তিনি যখন পেনশনে যাবেন তখন যদি অতিরিক্ত নিয়ে থাকেন তাহলে এডজাস্ট হয়ে যাবে। যানবাহনের অভিযোগটা হচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৪টি গাড়ি চলে। এরমধ্যে ৭টি গাড়ি বিঅরটিসি’র ভাড়া। বাকি কিছু বাস শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য অনুদান দিয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ। এখন ইউজিসি রাজস্ব খাত থেকে যে এলোকেশন দেয়া হয় সেই খাত থেকে আমরা গাড়ি কিনি। আমাদের ট্রান্সপোর্ট নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়। ২৭টি গাড়ি ইউজিসি’র অ্যাপ্রুভ আছে। বাকিগুলো যে অবৈধভাবে কেনা হয়েছে বিষয়টি এমন না। বাকি বাসগুলো যে আপত্তি করা হয়েছে। এটা কোনো অবৈধ না। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে করা হয়েছে। জ্বালানি খরচ যেহেতু রাজস্ব খাত থেকে আসছে সেহেতু তারা বলছে ২৭টির বাইরে আমরা দিতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, আপত্তিগুলো দেখে মনে হচ্ছে বিশাল অন্যায় করেছি। 

প্রতিবেদনের দায়িত্বে থাকা ইউজিসি’র সদস্য অধ্যাপক মো. আবু তাহের বলেন, ইউজিসি পর্যবেক্ষণের সারমর্ম তুলে ধরা হয়েছে। সেইসঙ্গে স্পষ্ট করে করণীয় ও সুপারিশ উল্লেখ করে দিয়েছি। এখন সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *