ভারতের সঙ্গে বিএনপি’র আলোচনা কেন ব্যর্থ হয়
নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ভারত’ শব্দটি নানা কারণে আলোচিত। অবশ্য এই সময়ে অনেকগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত এবং স্পর্শকাতর ঘটনা ঘটেছে। চোরাচালান দমন করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে বিজিবি’র জওয়ান নিহত এবং স্বাধীনতা দিবসে সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা নির্বাচন পরবর্তী ঢাকায় ভারত বিরোধিতার আগুনকে উস্কে দিয়েছে। অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়া, ফেলানীর মতো সীমান্তে নির্মম হত্যাকাণ্ড, তিস্তা চুক্তি ঝুলে থাকা অবস্থায় ফেনী নদীর পানি দিয়ে দেয়া এবং নানাভাবে বাংলাদেশকে ‘নিয়ন্ত্রণ’-এর চেষ্টাসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে স্ট্রং ন্যারেটিভ বিদ্যমান। কিন্তু এতদসত্ত্বেও রাজনীতি, অর্থনীতি এবং কূটনীতিতে এটি প্রভাবকের ভূমিকায় ছিল না কখনোই। আওয়ামী লীগ ভারতের প্রতি ‘নতজানু’ আর বিএনপি ‘ভারতবিরোধী’ এমন স্লোগান রাজনীতিতে বর্তমান। কিন্তু বাস্তবতা সব সময় এক নয়। ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কংগ্রেসের সুসম্পর্ক, তাই বলে অন্যদের সঙ্গে বৈরিতা? এমনটি যে নয়, তা বিজেপি’র সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্কই প্রমাণ।
বিএনপি’র বিরুদ্ধে অর্কেস্ট্রেইটেড ক্যাম্পেইনসহ আওয়ামী লীগের সব রকম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বড় সময় ধরে জাতীয়তাবাদী দলটি ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছে। সমালোচনা আছে- কেবল ভারতের মন পেতে মাঠের জোটবদ্ধ আন্দোলনের শক্তি হ্রাসের সমূহ ঝুঁকি মাথায় নিয়ে বিএনপি তাদের প্রধান জোটসঙ্গী জামায়াতকে একতরফাভাবে ত্যাগ কর
শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) ফাঁসি হওয়ার পরও রহস্যজনক কারণে নীরব ছিল বিএনপি। যদিও ওই ফাঁসি ঠেকাতে না পেরে শাসক দলে থাকা সাকা চৌধুরীর অনেক বন্ধু সেদিন চোখের জল ফেলেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এটি ছিল ২০১৬ সালের ঘটনা। এর ঠিক দু’বছরের মাথায় জামায়াতকে বাদ দিয়ে প্রবীণ রাজনীতিবিদ সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী মোর্চা গঠন করে বিএনপি। বলাবলি আছে, ভারতের ত্রয়োদশ প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির মধ্যস্থতায় সেই মোর্চা গঠিত হয়েছিল। আর এ কারণেই বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করলেও ’১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়। কথা ছিল নির্বাচনে শাসক দল যতই প্রভাব বিস্তার করুক না কেন, বিএনপি ৭০-৮০ মতান্তরে ‘সম্মানজনক আসন’ নিয়ে সংসদের বিরোধী বেঞ্চে বসবে। কিন্তু সেই মধ্যস্থতা ভেস্তে যায়। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরতে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টে অপেক্ষমাণ ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতা সেদিন আফসোস করে বলছিলেন, “রাজনীতি একতরফা বিষয় নয়। শেষ পর্যন্ত বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সুপারিশ ছিল বিএনপিকে ৪০টি আসন ছেড়ে দেয়ার। কিন্তু উন্নয়ন অংশীদার চীনের কারণে তা-ও পারা গেল না।” ২০১৮ সালের ওই নির্বাচনের বড় বেনিফিসিয়ারি ছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়া কয়েকজন নেতা। আদতে ওই নির্বাচন ছিল বিএনপি’র লস প্রজেক্ট। ২০১৪ সালে দিল্লির বিদেশ সচিব সুজাতা সিংয়ের ঢাকা সফর বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ) এখন গবেষণার বিষয়। সেই সময়কার ঘটনাবলী হজম করা এবং ’১৮-র নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পরও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায়নি বিএনপি। বরং দলের নেতারা দিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের বৈঠক হয়েছে দফায় দফায়, দেশে এবং দেশের বাইরে। এশিয়া-ইউরোপের বহু দেশে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের একটি দেশে দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে একটি বৈঠক হয়। আল্পস পর্বতমালা আর প্রশস্ত হ্রদের অনন্য সৌন্দর্যের ওই লীলাভূমিতে টু প্লাস টু ফরমেটে অনুষ্ঠিত বৈঠকটির মুখ্য আলোচ্য ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে সেখানে বিডিআর বিদ্রোহ, সীমান্ত হত্যা, সরকার দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিপরীতে বিএনপি প্রশ্নে ভারতের রিজারভেশন ইত্যাদি নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা হয়। বৈঠকের পরিবেশ ছিল আন্তরিকতাপূর্ণ। পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্মানের কমিটমেন্ট ছিল সেখানে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এই বৈঠকের কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান। বিএনপি’র তরফে সেদিন ভারতকে কিছু বিষয় খোলাসা করা হয়। বিশেষ করে আলোচনায় আসে বিএনপি জমানায় (২০০৪ সালে) চট্টগ্রামে ধরা পড়া ১০ ট্রাক অস্ত্রের বিষয়টি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান আটকের ঘটনা ছিল এটি। দু’টি বড় ট্রলারে করে এসব অস্ত্র সমুদ্রপথে চিটাগাংয়ের সিইউএফএল জেটিতে আনা হয়েছিল।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ১০ ট্রাক অস্ত্রই ভারতের সঙ্গে আজ অবধি বিএনপি’র শীতল সম্পর্কের মূল কারণ। সমালোচনা রয়েছে ভারতের চাপে পড়ে বিএনপি সরকার সেসব অস্ত্র আটক করতে বাধ্য হয়, অন্যথায় তা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে যেত। অবশ্য বিএনপি বরাবরই দাবি করে যে তখন সরকার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছিল বলেই অস্ত্রের বিরাট ওই চালান আটক করা সম্ভব হয়। সরকার যদি চাইতো সেগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতেই যেতো। ২০ বছর পরও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি চলছে। বিএনপি’র সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে এটাকে গলার কাঁটা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ভারতের কর্মকর্তারা মনে করেন, এত বড় আকারে না হলেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্ত্র ঢুকেছে। দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের বিষয়টি চোখে আঙ্গুল দিয়ে সেটি দেখিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রামে অস্ত্র উদ্ধারের পরদিন ভারতের আসাম ট্রিবিউনে ‘এই অস্ত্র উলফার’ বলে রিপোর্ট প্রচার হয়। রিপোর্টে বলা হয়, ভুটানে পরিচালিত অপারেশন অল ক্লিয়ার উলফার অস্ত্রভাণ্ডারকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। সেই অভিযানের পর থেকেই উলফা অস্ত্র সংগ্রহের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। সে সময় আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গোগইও এই অনুমান করেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, পশ্চিম ভুটানে উলফা গেরিলারা যে ধাক্কা খেয়েছে এবং যে পরিমাণ অস্ত্র তাদের হারাতে হয়েছে, তা পূরণে সম্ভবত চট্টগ্রামে ধরা পড়া অস্ত্রগুলো আনা হচ্ছিলো। অস্ত্রের চালান ধরা পড়ায় সে সময় তিনি তৎকালীন বিএনপি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জ্ঞাপন করেন। অস্ত্র উদ্ধারের পর টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ত্রিপুরা পুলিশের তৎকালীন মহাপরিচালক জিএন শ্রীবাস্তবকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, অস্ত্রের চালানটি উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোর মধ্যে বিতরণের জন্য আসছিল।
ভারতের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সাবেক উপ-মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) গঞ্জিত সিং ২০২৩ সালে ভারতের ইন্ডিয়া টুডেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, সেই ১০ ট্রাক অস্ত্র শুধু উলফার জন্য আনা হয়নি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সক্রিয় অন্য বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও এটি পেতো। ইন্ডিয়া টুডের ভাষ্য মতে, উলফার তৎকালীন কমান্ডার-ইন-চিফ পরেশ বড়ুয়া এসব অস্ত্র আনার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেন। তার লক্ষ্য ছিল আসামে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন জোরদার করা। ঘটনাটি বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের নলেজের বাইরে ছিল না দাবি করে রিপোর্টে বলা হয়, চীনের দক্ষিণাঞ্চলের বিহাইস বন্দর থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে অস্ত্র-ভর্তি এই জাহাজটি কীভাবে এবং কোন পথে আসছিল সেটির ওপর গোয়েন্দা নজর রাখছিলেন মি. সিং। চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের একটি হোটেল থেকে পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছিলেন পরেশ বড়ুয়া। ইউরোপের মাটিতে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি’র সেই বৈঠকে তথ্য-উপাত্ত শেয়ার করে অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় ২০০১-০৬ সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নাকচ করা হয়। সেই সঙ্গে নির্বাচন তো বটেই, বাংলাদেশের যেকোনো বিষয়ে বন্ধু ভারতের ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান কামনা করা হয়। আওয়ামী লীগের অনেকেই যে যুদ্ধবন্ধু ভারতের একপক্ষীয় অবস্থানকে পছন্দ করেন না, সেটিও তাদের বোঝানোর চেষ্টা হয়। ইউরোপের এক শান্ত শহরে বসে আলোচনাটি হচ্ছিলো। কিন্তু না, সেই আলোচনার প্রতিফলন তো নয়ই বরং ঘটা করে উল্টোটা করা হয়েছে বাংলাদেশের বহুল আলোচিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে। যা ক্ষমতার বেনিফিশিয়ারিদের ছাড়া গোটা বাংলাদেশকেই আজ ভারতবিরোধী করে তুলছে! এটি যে উভয় দেশের জন্য অশান্তির কারণ হতে যাচ্ছে- তা নিয়ে শঙ্কিত রাজনীতিবিদ এবং বোদ্ধামহল।
ভূরাজনীতি আর আমেরিকার সরব উপস্থিতির কারণে ভারত ভিন্ন কৌশল নেয় এমনটাই বলা হচ্ছে। বিএনপি এখানে পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। নিজস্ব কৌশলেও ভুল ছিল।
বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর রাজধানীতে অনুষ্ঠিত বিএনপি’র প্রথম প্রতিবাদ সমাবেশে জাতীয়তাবাদী দলটির বিচক্ষণ নেতা ড. আব্দুল মঈন খান বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারত বিদ্বেষ কেন বাড়ছে? তা খুঁজে দেখতে ভারতের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলমান ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইনের সমর্থক গণঅধিকার পরিষদের নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বিবিসিকে বলেন, ভারত যদি একপক্ষীয় সম্পর্ক মেইনটেইন করে তাহলে তো আমাদের অ্যান্টি ইন্ডিয়ান হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই। জনগণের প্রতি জনগণের একটা শ্রদ্ধা- ভালোবাসা-সম্মানের সম্পর্ক আমরা সবসময় তৈরি করতে চাই। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আমরা এই বার্তাটা দিতে চাই যে, ভারত যেভাবে বাংলাদেশকে বিশেষ করে গত পনেরো বছর দেখে আসছে এটা ঠিক না।
নুর বলেন, বন্দর-ট্রানজিটসহ যা নেয়ার সব-ই তো ভারত নিয়েছে। কাজেই এখন অন্তত ভারত সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে- এটাই আমাদের চাওয়া। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নয় বরং তারা একটি দলকে সমর্থন দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিবেশী বদলাতে পারবো না, তাই যত তাড়াতাড়ি ভারত বাস্তবতা বুঝবে তত উভয়ের মঙ্গল। পেশাদার কূটনীতিক নাসিম ফেরদৌস মনে করেন- সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতবিরোধী যে ক্যাম্পেইন চলছে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ক’দিন পরেই ভারতে জাতীয় নির্বাচন। বয়কট আন্দোলন অনলাইন মাধ্যম ছাপিয়ে যদি রাস্তায় বড় আন্দোলনে রূপ নেয় তবে রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে! ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলতে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা দলীয় ফোরামে আলাপ-আলোচনা করছি বিধায় এটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য প্রদান সমীচীন মনে করছি না।