সূচনা করেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। কিছুদিন আগে দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশে ৭ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে কার্যত গা ঢাকা দিতে হয়েছিল। তার এ বক্তব্য সোমবার স্টেট ডিপার্টমেন্ট নাকচ করে দেয়। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জানান, “এই বক্তব্য সঠিক নয়।”
বাইডেন প্রশাসন এই বক্তব্যকে সরাসরি খারিজ করে দেওয়ার পরেও পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী অবশ্য নিজের দাবি থেকে সরে আসছেন না। মঙ্গলবার এ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে বিবিসি। বিবিসিকে পিনাক বলেন, “প্রথম কথা হল, আমি সেদিন কিন্তু নতুন কোনও কথা বলিনি। বাংলাদেশের নির্বাচনের ঠিক আগে সে দেশের মিডিয়াতেই ভূরি ভূরি খবর বেরিয়েছিল যে হঠাৎ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে আর কোথাও দেখা যাচ্ছে না।”
“যারা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে নিয়মিত নজর রাখেন তারা সবাই এটা জানেন, আমিও জানি।” “এখন ঘটনা হল, এর ঠিক কিছুদিন আগেই দিল্লিতে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে ‘টু প্লাস টু ডায়ালগে’ কী ঘটেছে, সেটাও পাবলিক ডোমেইনে আছে এবং সবাই তা জানেন।” “আপনি বলতে পারেন সেই টু প্লাস টু-র বৈঠকের পরই রাষ্ট্রদূতের এই অন্তর্ধান, আমি শুধু দুয়ে দুয়ে চার করেছি!” মিলারের বক্তব্য প্রসঙ্গে পিনাক বলেন, “আমেরিকা ছাড়ুন, একটা ছোট্ট দেশের সরকারকেও যদি জিজ্ঞেস করা হয় অমুক দেশের কড়া অবস্থানের কারণেই কি আপনাদের রাষ্ট্রদূত গা ঢাকা দিয়েছেন, কেউ কি স্বীকার করবে যে হ্যাঁ, সেটা সঠিক?”
পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (অর্থনৈতিক সম্পর্ক) পদ থেকে অবসর নেন কয়েক বছর আগে। পিনাক চক্রবর্তী সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে একটি বই লিখেছেন, যার নাম ‘ট্রান্সফর্মেশন : ইমার্জেন্স অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ইভোলিউশন অব ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ টাইস’। গত ২৮শে মার্চ দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে (ওআরএফ) এই বইটির ওপর একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে লেখক মি. চক্রবর্তী-সহ অন্য বিশেষজ্ঞরাও যোগ দেন।
ওই অনুষ্ঠানে পিনাকের দেয়া একটি বক্তব্য মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। অনুষ্ঠানে একটি প্রশ্নের জবাবে পিনাক রঞ্জন বলেছেন, তিনি নিশ্চিত যে ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কার্যত আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশের নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমেরিকার অতিরিক্ত ‘হস্তক্ষেপে’র চেষ্টা ভারত যে পছন্দ করছে না এবং তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে দিল্লি তাদের এই মনোভাবের কথা গত নভেম্বরে ‘টু প্লাস টু ডায়ালগে’র সময়ই ওয়াশিংটনের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি ভারতের পক্ষ থেকে তখন এই কড়া বার্তাটা (আমেরিকাকে) শুনিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার পরিণতিতে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত, যিনি তার কিছুদিন আগেও অমুক বিএনপি নেতাকে দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে ডেকে আনছিলেন বা তমুক বিএনপি নেতার বাসায় গিয়ে হাজির হচ্ছিলেন তাকে আর ভোটের সময় দেখাই গেল না! কোথায় যে তিনি গা ঢাকা দিলেন সে কেবল তিনিই জানেন!”
মিলারের ব্রিফিং
সোমবার ম্যাথিউ মিলারের ব্রিফিংয়ে এনিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারি। পরে তিনি এ নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তাতে লিখেছেন, “বাংলাদেশে ৭ই জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পূর্বমুর্হূতে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছিলেন- ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর এমন মন্তব্যকে আমলে নেয়নি স্টেট ডিপার্টমেন্ট।” “সোমবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জনের এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার হাস্যরসের সঙ্গে বিষয়টিকে উড়িয়ে দেন এবং এ ধরনের অভিযোগ সঠিক নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।’’ মিলারের কাছে প্রশ্ন ছিল, “ভারতের চাপের কারণে বাংলাদেশের ৭ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পূর্বমুর্হূতে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত গা ঢাকা দিয়েছিলেন বলে, নয়াদিল্লিতে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন ঢাকায় হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া এক ভারতের কূটনীতিক । সত্যিই কি তাই ঘটেছিলো?” জবাবে মুখপাত্র মিলার হাসতে হাসতেই বলেন, “দিল্লিতে যত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন বা বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান হয় তার সবগুলো আমি ফলো করি না!” তবে সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, “আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলব – না, এটা সঠিক নয়!” এসময় বার্তা সংস্থা এপি বা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সাংবাদিক ম্যাথিউ লি জানতে চান, “কেন (দিল্লির সবগুলো বুক লঞ্চ ইভেন্ট) ফলো করেন না?” জবাবে মি মিলার বলেন, “আমার আরও অনেক কাজ থাকে। সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকাটাই জরুরি মনে করি।”