বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ৫০ বছরে বিশ্বজুড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে যেসব টীকা আবিষ্কার হয়েছে, তা কমপক্ষে ১৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী নবজাতক শিশুরা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। সংস্থাটি বলেছে, এর অর্থ হলো গত অর্ধ শতাব্দীতে প্রতি বছর প্রতি মিনিটে রক্ষা পেয়েছে ৬টি জীবন। বৃটেনের চিকিৎসা বিষয়ক বিখ্যাত ল্যানচেট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত গবেষণায় এসব কথা বলা হয়েছে। সেখানে এক্সপ্যান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশনের (ইপিআই) অধীনে ১৪টি টীকার প্রভাব বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই কর্মসূচি আগামী মাসে তার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বিবৃতিতে বলেছেন, ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী আবিস্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম এসব টীকা। এর ফলে এক সময় যেসব রোগ অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করা হতো, তা প্রতিরোধযোগ্য হয়েছে। টীকা আবিস্কারের কারণে জলবসন্ত নির্মূল হয়েছে। পোলিও বিদায় নেয়ার দ্বারপ্রান্তে।
অতি সম্প্রতি যেসব টিকা আবিষ্কার হয়েছে তাতে ম্যালেরিয়া এবং নারীদের জরায়ুর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ভাল ফল করছে। এসব রোগকে আমরা পিছনে ফেলে দিচ্ছি। অব্যাহতভাবে গবেষণা, বিনিয়োগ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা বর্তমানে এবং আগামী ৫০ বছরে আরও লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারি। গবেষণায় দেখা গেছে, গত পাঁচ দশকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কমপক্ষে ১০ কোটি ১০ লাখ নবজাতকের জীবন রক্ষা করা গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, শিশুদেরকে যেকোনো রকম স্বাস্থ্য বিষয়ে সবচেয়ে বড় একক অবদান হলো টীকা দেয়া। এতে শুধু তারা সুস্থই থাকে এমন নয়। একই সঙ্গে প্রাপ্তবয়সেও তারা সুস্থ থাকতে পারবে।
গত কমপক্ষে ৫০ বছরে ১৪টি রোগের বিরুদ্ধে টীকা দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম- ডিপথেরিয়া, হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি, হেপাটাইটিস বি, জাপানিজ এনসেফালাইটিজ, হাম, মেনিনজাইটিস এ, পার্টুসিস, নিউমোনিয়া, পোলিও, রোটাভাইরাস, রুবেলা, টিটেনাস, টিবি, হলুদ জ্বর। এসব রোগের টীকা নবজাতকদের মৃত্যু শতকরা ৪০ ভাগ কমিয়ে দিয়েছে। আফ্রিকায় এই হার শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি। এর মধ্যে হাম একটি অতি সংক্রামক রোগ। এটা প্রধানত শিশুদের আক্রমণ করে। কিন্তু এই রোগের টীকার প্রভাব উল্লেখযোগ্য।
গবেষণা বলছে, টীকা দেয়ার ফলে এতে শতকরা ৬০ ভাগ জীবন রক্ষা করা গেছে। পোলিও টীকার কারণে কমপক্ষে দুই কোটি মানুষ এখন পৃথিবীতে বেঁচে আছেন। তাদেরকে এই টীকা দেয়া না হলে তারা পঙ্গু হয়ে যেতেন।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যখন একটি টীকা একটি শিশুর জীবন রক্ষা করে, তার অর্থ হলো ওই ব্যক্তি গড়ে ৬৬ বছর পূর্ণাঙ্গ সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারেন।