সিলেটে সুরমা নদীর উপরে ক্বীন ব্রিজ। তার উপরে লোহা আর টিনশেডের অবকাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক ঘড়ি। শত বছরের স্মৃতি নিয়ে এই দাঁড়িয়ে থাকা এই আলী আমজাদের নামে পরিচিত এই ঘড়ি সিলেটের ঐতিহ্য। তার সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা ও ভারতের নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর ট্রফি উন্মোচন করেন। পাঁচ ম্যাচের এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে আলোচনায় দেশজুড়ে তীব্র উত্তাপ আর মাঠের লড়াইয়ে দুই দলের সবশেষ সিরিজে মাঠে বিতর্ক। তবে কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে চাচ্ছেন না নিগার। সবশেষ দেখায় ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে বিতর্ক জন্ম দিয়েছিল ওয়ানডে সিরিজে ভারত অধিনায়কের আউট নিয়ে। যার রেশ এখনো কাটেনি। যে কারণে এই সিরিজের আগে বিতর্কের জন্ম দেয় আম্পায়ার তানভীর আহমেদকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
যা কিনা মাঠের লড়াই শুরুর আগে ফের জন্ম দিয়েছে নতুন করে সমালোচনার। তবে সিরিজ শুরুর আগে নিগার জানিয়েছেন, এখন সেই রেষারেষি নেই। তিনি বলেন, ‘প্রথমত দেখেন, জানি না যেটা আপনি বললেন রাইভারলির কথা। অতীতে অনেক কিছু হয়ে গেছে। কিন্তু হোয়াট এভার হ্যাপেনড, হ্যাপেনড। ওটাতে আমরা বসে নেই। কিন্তু গুড টু হিয়ার যে, তারা বলছে আমরা আগের থেকে অনেক ম্যাচিউরড টিম। এর মানে হচ্ছে- তারা আমাদের হালকাভাবে নেয়নি অবশ্যই।’
অন্যদিকে ঢাকায় সরাদেশ সূর্যের তীব্র তাপে ভীষণভাবে উত্তপ্ত। গরমে মানুষের সাধারণ জীবন কাটছে বেশ কষ্টে। সিলেটে তাপমাত্রা ঢাকার তুলনায় কম হলেও লু হাওয়া ও তীব্র গরমও ঢাকার মতোই। যে কারণে মাঠের লড়াইয়ের আগে প্রকৃতির এই বৈরী আচরণও আছে আলোচনায়। তবে টি- েটোয়েন্টি সিরিজের ম্যাচগুলো শুরু হবে বিকাল ৪টায়। যে কারণে নারী বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক খুঁজে পাচ্ছে কিছুটা হলেও স্বস্তি। নিগার বলেন, ‘মোরাললেস যখন ৪টার সময় খেলবো, তখন রোদের তাপমাত্রাটা একটু হলেও কমে যাবে। একটু স্বস্তিতে খেলতে পারবো দুই দল।’ শুধু তাই নয়, টাইগার অধিনায়কের স্বস্তির আরেকটি কারণ সিলেটের উইকেট। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেটের উইকেট কিন্তু বরাবরই ভালো। স্পোর্টিং উইকেট। ব্যাটাররা রান করতে পারে- বড় স্কোর হয়। টি-টোয়েন্টিতে সবাই চায় স্কোর হোক। সেজন্য বলবো যে, সিলেট আইডিয়াল একটা প্লেস টি-টোয়েন্টি খেলার জন্য। সো আমি আশা করছি যে, খুব ভালো বোথ দ্য টিম কনফিডেন্সের সঙ্গে খেলতে পারবে।’
মেয়েদের ক্রিকেটে ধারে-ভারে ভারতের থেকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ দল। সে ওয়ানডে ফরম্যাট হোক কিংবা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট। দুই বিভাগেই পরিসংখ্যানের বিচারে ভারতের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন নিগার সুলতানারা। ফলে সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যে কোনো জয় যথেষ্ট স্মরণীয়। সেই স্মরণীয় জয়ের তালিকায় যুক্ত হয়েছে গেল বছর জুলাইয়ে মিরপুরের আসা একমাত্র জয়টি। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন ১৮ দেখায় ৩ জয়। প্রথম জয় পেয়েছিল ২০১৮তে কুয়ালালামপুরে। দ্বিতীয় জয়টিও একই বছর। এই সিরিজটাকে নিগার দেখছেন নিজেদের সুযোগ হিসেবেই। তিনি বলেন, ‘সো ফার আমি যেটা চিন্তা করছি এটা সুযোগ হিসেবে দেখছি। কারণ ভারত একটা ভালো দল। এবং তারা কিন্তু ফুল প্যাকেজ নিয়ে এবার এসেছে। বিশ্বকাপে মোর অর লেস তারা এই টিমটাই খেলবে। ওদের জন্য একটা ভালো প্রস্তুতি, আমাদের জন্যও। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে পাঁচটা টি-টোয়েন্টি খেলা এবং টিমটাকে যে টাফ টাইমটা পার করে এসেছি; সেটা থেকে কামব্যাক করতে হলে আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। সো আমাদের জন্য এটা বড় সুযোগ।’ অন্যদিকে নিজেদের সবশেষ সিরিজটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেখানে নিগাররা হয়েছে বাজেভাবে হোয়াইটওয়াশ। বিশেষ করে ব্যাট হাতে দলের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এ নিয়ে নিগার বলেন, ‘প্রথমে ব্যাট করে যদি ১৪০-১৫০+ রান যদি করতে পারি তাহলে তাদের জন্য চেজ করা ডিফিকাল্ট হবে। তবুও বলবো না, কারণ টি-টোয়েন্টিতে এখন কোনো রানই আসলে সেফ না। সবকিছুই আসলে আনসেট, যেভাবে আসলে আমরা আইপিএল দেখছি। মেয়েদের ম্যাচ দেখেছি, ওখানেও বড় বড় স্কোর চেজ হচ্ছে। ১৪০ বা ১৫০ যদি করতে পারি, তাহলে আমাদের বোলিং অ্যাটাকের দিক থেকে ডিফেন্ড করাটা হয়তো বা একটু হলেও সহজ হবে।’