সর্বশেষ
Home » অর্থনীতি » সৌদি আরবের কাছে তহবিল সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ – রাজনৈতিক সংলাপ আজ

সৌদি আরবের কাছে তহবিল সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ – রাজনৈতিক সংলাপ আজ

রিয়াদে আজ রাজনৈতিক সংলাপে বসছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। সংলাপে বাংলাদেশে বড় অঙ্কের তহবিল জমা রাখতে রিয়াদকে অনুরোধ করবে ঢাকা। গত বছর পাকিস্তানে ভয়াবহ বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলাকালে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ২০০ কোটি ডলার জমা করে তহবিল সহায়তা দিয়েছিল সৌদি আরব। রিজার্ভ সংকট কাটাতে পাকিস্তানের আদলেই বাংলাদেশ সৌদির ওই তহবিল সহযোগিতা চাইবে বলে জানিয়েছে সেগুনবাগিচা। রিয়াদে রাজনৈতিক সংলাপে অংশ নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং এ সংক্রান্ত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা রোববার মধ্যরাতে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন। প্রতিনিধিদলে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সৌদি সফর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রোববার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, সৌদি কোম্পানিগুলোকে অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট করতে আকৃষ্ট করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেশটির সঙ্গে আর্থিক খাতে সহযোগিতা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। তারা যদি আর্থিক খাতে বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে এ নিয়েও কথা হবে। সৌদি আরব আমেরিকা ও ইউরোপে টাকা জমা রাখে। বাংলাদেশের অনুকূলে টাকা জমা রাখার একটি সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। যেকোনো বিদেশি কোম্পানি ও বিদেশি ব্যক্তি বাংলাদেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে তাদের অর্থ রাখতে পারবেন। অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রায় ডিপোজিট করার এই সুযোগ দেশে বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজতর করা এবং মার্কিন ডলারের একটি প্রধান উৎস তৈরি করছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা একটি নতুন সুযোগ তৈরি করেছি। এটিকে জনপ্রিয় করতে চাই। এমন দেশ রয়েছে যেখানে বিদেশি সংস্থা এবং ব্যক্তিরা এই জাতীয় ডিপোজিট করেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়াতে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে চলতি বছরের মার্চ মাসে সংসদে অফশোর ব্যাংকিং আইন, ২০২৪ পাস হয়। বাংলাদেশি ও বিদেশি নাগরিকদের এ সেবার নিয়ম-নীতি শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক ঋণকে ‘না’ বলার মতো অবস্থানে থাকলেও মাঝে মাঝে বিভিন্ন কারণে ঋণ নিতে হয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশীদার দেশ, যাদের সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রয়েছে। স্মরণ করা যায়, দেশে রিজার্ভ সংকট চলছে। এ থেকে উত্তরণে বিভিন্ন উপায় খুঁজছে ঢাকা। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনার ধরাবাহিকতায় সৌদি আরবের সঙ্গে কথা বলবেন বাংলাদেশের মন্ত্রী-উপদেষ্টা তথা ডেলিগেশন সদস্যরা। স্মরণ করা যায়, ২০১৬ সালে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠানের জন্য সমঝোতা স্মারক সই হলেও ২০২২ সালের আগে এটি সেই অর্থে কার্যকর ছিল না। ২০২২ সালে ঢাকা-রিয়াদ প্রথম আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক সংলাপ হয়। এতে যোগ দিতে ঢাকা সফর করেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফায়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। এবারের সংলাপেও তিনিই সৌদি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিবেন। ভূ-রাজনীতিতে নানা পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব পারস্পরিক সম্পর্ক ঝালাইয়ে আগ্রহী। দুই দেশ সম্পর্ককে সমন্বিত অংশীদারিত্বে উন্নীত করার প্রচেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক সংলাপে বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিতভাবে আলোচনা হবে। তাছাড়া ঢাকার পক্ষ থেকে গতবছরের সংলাপে উত্থাপিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রস্তাবগুলোও আলোচনায় স্থান পাবে। আলোচনার অন্যতম বিষয় হবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বাংলাদেশ সফর। বাংলাদেশের যুবরাজ এরইমধ্যে বাংলাদেশ সফরে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। চলতি বছরের শেষদিকে তার সফরটি হতে পারে। আজকের সংলাপে দুই দেশ জনশক্তি রপ্তানি, বেসরকারি খাতে ব্যবসা বাড়ানো, সৌদি উন্নয়ন তহবিলের (এসএফডি) মাধ্যমে বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশে ইউরিয়া ও ডিএপি সারকারখানা স্থাপন, বাংলাদেশের পেট্রোক্যামিকেল ও পর্যটনে সৌদি বিনিয়োগের উদ্যোগ এবং পূর্ব-প্রস্তাবিত বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও কথা হবে। গাজায় ইসরাইলের অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিন সংকটসহ মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি আলোচনায় আসবে। প্রাসঙ্গিকভাবেই ইয়েমেনের সর্বশেষ অবস্থা এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও কথা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *