বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা ভবিষ্যতে নতুন যেকোনো সরকারের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অটুট থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভারতের বিরোধীদল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে কীভাবে দেখছেন, দল এবং জনগণ এই পর্যায়ে দুই দেশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত- এমন প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন রাহুল গান্ধী।
অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা পুরনো। বাংলাদেশিদের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পৃক্ততা বজায় রেখেছিলেন আমার দাদী। আমি মনে করি বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান নিয়ে ভারতের মধ্যে কিছু উদ্বেগ রয়েছে। আমরা কিছু উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেছি।”
তিনি বলেন, “আমি মনে করি বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা ভবিষ্যতে অন্য যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখবে ভারত।”
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কী কথা হয়েছে সেই প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, “বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যেমন কথা বলেছি তেমনি তারাও কথা বলেছে। আমরা যেকোনো ধরনের সহিংসতার বিরোধীতা করি। আমরা চাই এটা বন্ধ হোক। আসলে এটা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব যত দ্রুত সম্ভব তা বন্ধ করা। আমাদের তরফে ভারত সরকারের উচিত চাপ প্রয়োগ করা যাতে সহিংসতা বন্ধ হয়।”
গণতন্ত্র, সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইস্যুতে মোদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দেয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ বিষয়ে রাহুলের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “গণতন্ত্র নিয়ে যে লড়াইয়ের কথা বলছেন সেটা ভারতীয়দের লড়াইয়ের বিষয়। সম্মান রেখেই বলছি, এটা অন্যদের কোনো বিষয় নয়, এ সমস্যার বিষয়টি আমাদের। বিষয়টি নিয়ে কী করতে হবে সেটা আমরা দেখবো। দেশে গণতন্ত্র নিরাপদ সেটা আমরাই নিশ্চিত করবো।”
তিনি বলেন, “যেকোনো সাধারণ গণতন্ত্রের চাইতে ভারতের গণতন্ত্র ভিন্ন। এর পরিধির কারণেই এটা ভিন্ন। আপনি যদি বিশ্বের গণতন্ত্রের ভিশন নিয়ে কথা বলেন তাহলে দেখবেন সে জায়টার বিশাল একটা অংশ জুড়ে রয়েছে ভারতের গণতন্ত্র। বিশ্ব ভারতের গণতন্ত্রকে শুধু ভারত নয় বরং বিশ্বের অন্য অংশের জন্যও সম্পদ হিসবে মনে করে, এ বিষয়টাকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চীন নীতির সমালোচনা করে রাহুল বলেন, চীনের সেনারা ভারতে প্রবেশ করে নয়াদিল্লির সমান লাদাখ এলাকা দখল করে নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বিষয়ে তিনি বলেন, “ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিক যেই ক্ষমতায় আসুক ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক মিত্রতার মৌলিক বিষয়টি অটুট থাকবে।”
কংগ্রেসের রাজনীতি প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, “বিজেপির নীতি অনুসারেই কাজ করতে হবে কংগ্রেস এটা মনে করেনা। শুধু বতর্মান সময় নয় বরং স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই কংগ্রেস চেয়েছে ভারত যেন নিরপেক্ষ একটি দেশ হয়।”
তিনি বলেন, “আমরা এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, নাগরিকদের অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গভীর সংকট রয়েছে। আমরা এই সংকট সমাধানে কাজ করবো। এটাকে আমরা মণ্ডলের বিপরীতে কমণ্ডলের লড়াই হিসাবে দেখছিনা। দেশে যে সমস্যা রয়েছে সেগুলো বিশদভাবে আমরা অনুধাবন করতে চাই। তারপর এগুলো নিয়ে অনকেগুলো নীতি নির্ধারণ করা হবে, যার মধ্যে পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা উত্থাপন একটি বিষয়।”