ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে কমেছে দেশের বিদেশি লেনদেনের ঘাটতি। তারপরেও নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭৬ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ১ ডলার ১০৯ টাকা ধরে যার পরিমাণ ৫১ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। অবশ্য বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যে ঘাটতি কমেছে ৫৯.৭২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশের পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫৭২ কোটি ডলার। একই সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি ডলার। এতে ৪৭৬ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ১ ডলার ১০৯ টাকা ধরে যার পরিমাণ ৫১ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১৮২ কোটি ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যে ঘাটতি কমেছে ৫৯.৭২ শতাংশ।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর দেশে ডলারের প্রকট আকার ধারণ করে।
এরপরে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। এরফলে এলসি খোলার হার কমে যায়। এসব উদ্যোগের সুফল ব্যবসায়ীরা এখন পেতে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাণিজ্যে ঘাটতি পুরোপুরি কমে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের আলোচ্য এই সময়ে চলতি হিসাবে কোনো ঘাটতি তৈরি হয়নি। উল্টো এই সূচকে ইতিবাচক ধারা দেখা গেছে। এই সময়ে ৫৮ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত ছিলো। আগের অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাব ঘাটতিতে ছিল। অর্থাৎ বছরের শুরুতে চলতি হিসেবে এখন ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিলো ৫৬৭ কোটি ডলার।
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।
এদিকে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ যেখানে ২১৬ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে ১৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমেছে। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৪.৫০ শতাংশ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। এ সূচকটি আগের বছরের চেয়ে ১০.০৮ শতাংশ কমে ৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৭৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
এছাড়া আলোচিত সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত আছে। অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।