পাপে ছাড়ে না বাপেরে। অপরাধী তার অপরাধ করার সময় এমন কিছু চিহ্ন বা লক্ষণ রেখে যায়, যার কারণে তাকে চেনা সহজ হয়ে যায়। তেমনই এক অপরাধে জড়িয়ে পড়েন ভারতের মিরাতের এক যুবতী। তিনি পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে স্বামীকে হত্যা করেন। সঙ্গে নেন প্রেমিককে। এরপর মৃতদেহ পনেরো টুকরো করে একটি ড্রামে ভরেন। পরবর্তীতে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে প্রেমের উড়ন্ত বাতাসে ভাসতে ছুটি কাটাতে চলে যান হিমাচলে। পরিকল্পনা করেন ফিরে এসে মৃতদেহটি গুম করে দেবেন। সবই পরিকল্পনা মাফিক চলছিলো। তবে বাধ সাধে ছোট্ট একটি ভুল। মাটিতে পুঁতে ফেলার উদ্দেশে উঁচু করার সময় কয়েকজন শ্রমিক ড্রামের ঢাকনা খুলে ফেলেন। দুর্গন্ধে ছেয়ে যায় চারপাশ। এরপরই ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।
ঘটনাটি ভারতের উত্তর প্রদেশের নারী মুসকান রাস্তোগি ও তার প্রেমিকে সাহিল শুক্লার। পরকিয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে প্রেমিকের সঙ্গে একযোগে স্বামী সৌরভ রাজপুতকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন মুসকান। তদন্ত অনুযায়ী, মুসকান ও সাহিল ৩রা মার্চ সৌরভকে হত্যা করেন। এরপর তা পনেরো টুকরো করে প্লাস্টিকের ড্রামে ভরে এর ওপর ভেজা সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেন। মুসকান ও সাহিলের পাহাড়ে একান্তে কাটানো সময়ের ভিডিওগুলো উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের দেখে মনেই হয়নি এত বড় একটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ওই ভিডিওতে দুজনকে খুবই প্রাণবন্ত দেখায়। ছুটি কাটিয়ে ১৭ই মার্চ মিরাটে ফিরে আসেন ওই যুগল। সিদ্ধান্ত নেন মৃতদেহটি গুম করে দেবেন। এজন্য কয়েকজন শ্রমিককে ডাকেন এবং তাদেরকে ড্রামটি কোথাও পুঁতে ফেলতে বলেন। তবে তা খুবই ভারি হওয়ায় শ্রমিকরা উঁচু করতে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে ড্রামের ঢাকনা খুলে যায় এবং চারিদিক পঁচা গন্ধে ছেয়ে যায়। ড্রাম উঁচু করতে না পারায় আর গন্ধ নিয়ে সন্দেহ হয় শ্রমিকদের। তারা সেখান থেকে চলে যান। এমতাবস্থায় মুসকান ঘাবড়ে যান। এক পর্যায়ে তিনি তার পিতার বাড়ি চলে যান। প্রথমে তিনি হত্যার দায় তার ননদ ও ননদের স্বামীর ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন। তবে তার পিতা-মাতা যখন তাকে জেরা করতে শুরু করেন তখন হত্যার দায় স্বীকার করেন মুসকান। পিতা-মাতা তাকে থানায় নিয়ে গেলে সেখানে নিজের ও সাহিলের অপকর্মের কথা স্বীকার করেন। তাদেরকে পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে ওই যুগল বিচার বিভাগীয় হেফাজতে আছেন।

উল্লেখ্য, সৌরভ একজন নৌ কর্মকর্তা ছিলেন। ২০১৬ সালে একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেন সৌরভ ও মুসকান। তাদের ছয় বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। বিয়ের পর থেকেই সৌরভের পরিবারের সঙ্গে মুসকানের সম্পর্ক সাপে নেউলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্ত্রী নিয়ে এক পর্যায়ে ভাড়া বাড়িতে ওঠেন তিনি। ২০১৯ সালে স্ত্রীর পরকিয়া প্রেমের বিষয়ে জানতে পারেন সৌরভ। যদিও তিনি বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন তবে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। নৌ বাহিনীর চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর লন্ডনে কাজ শুরু করেন সৌরভ। মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে দেশে এলে স্ত্রীর ও প্রেমিকের মাধ্যমে নৃশংস হত্যার শিকার হন তিনি। মুসকানের পিতা-মাতার ভাষ্য অনুযায়ী, সৌরভ তাদেরকে মাদক গ্রহণে বাধা দেবে এ ভয় থেকেই তাকে হত্যা করেন মুসকান ও সাহিল। উল্লেখ্য, সৌরভের পরিবারের দাবি- টাকার জন্য সৌরভকে বিয়ে করেন মুসকান। তারা শুরু থেকেই মুসকানকে অপছন্দ করতেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here