তেহরানের প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধে ইসরায়েলকে সাহায্য না করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সকে সতর্ক করেছে ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এই তথ্য জানিয়েছে। বলা হয়েছে, যদি এই তিনটি দেশ ইসরায়েলকে সহায়তা করে, তবে এই অঞ্চলে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটি এবং জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে তেহরান।

ইরানের আধা-সরকারি মেহর নিউজ এজেন্সি সরকারের একটি বিবৃতির বরাত দিয়ে বলেছে, ইসরাইলের ওপর ইরানি হামলা প্রতিহত করতে যে কোনো দেশ অংশ নিলে, সেই দেশের সব আঞ্চলিক ঘাঁটি, যার মধ্যে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সামরিক ঘাঁটি এবং পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরের জাহাজ ও নৌযান অন্তর্ভুক্ত, ইরানি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।

 

শুক্রবার ইরানে ভোর হওয়ার আগ মুহূর্তে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। “রাইজিং লায়ন” নামে পরিচিত এই অভিযানে দুটি প্রধান লক্ষ্য ছিল- ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্রের ওপর ব্যাপক বিমান হামলা এবং তেহরানে সুনির্দিষ্ট হামলার মাধ্যমে সামরিক নেতৃত্বকে দুর্বল করে দেওয়া।

ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্রুত অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে এই হামলা চালায়। এই হামলার বিষয়ে শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে ইরানের জাতিসংঘ দূত আমির সাঈদ ইরাভানি জানান, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন এবং ৩২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

বহু বছরের হুমকি ও সম্প্রতি কয়েক দিনের টান টান উত্তেজনার পর ইসরায়েলের এই হামলা আসে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না। ইসরায়েল একতরফাভাবে এই পদক্ষেপ নেয়।

ইসরায়েলের হামলার জবাবে শুক্রবার সন্ধ্যায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যা ইসরায়েলের সামরিক ও অস্ত্র উৎপাদনকারী কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হেনেছে।

তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ইরান ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে এবং বেসামরিক জনপদে হামলা চালিয়ে বড় ধরনের ভুল করেছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এর জন্য তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, ইরানের হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা-পাল্টা হামলা অব্যাহত থাকে। এতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয় এবং বহু মানুষকে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যেতে দেখা যায়। ইসরায়েলের জেরুজালেম ও তেল আবিবে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে জরুরি তৎপরতা চালাচ্ছে দেশটির উদ্ধারকারী দল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here