সর্বশেষ
Home » অর্থনীতি » বিদেশ থেকে ডলার আসার চেয়ে যাওয়ার হার বেশি হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে

বিদেশ থেকে ডলার আসার চেয়ে যাওয়ার হার বেশি হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে

দেশের বাইরে বিদেশের মাটিতে ক্রেডিট কার্ডে ডলার খরচ বেড়েছে বাংলাদেশিদের। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বাংলাদেশিদের। গত ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকরা বিদেশে গিয়ে ৯২৯ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫.২৯ শতাংশ বেশি। আর গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে নগদ ডলারের সংকট চলছে। ফলে মানুষ বিদেশ ভ্রমণ বা চিকিৎসার জন্য ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর ব্যাংকাররা জানান, নগদ ডলার সংকটে ভ্রমণকারীরা এখন কার্ডভিত্তিক ডলার বেছে নেয়ার কারণে কার্ডে লেনদেন বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ডলারের সংকটে কেউ ক্যাশ বা নগদ ডলার নিয়ে ভ্রমণে যেতে পারছে না। বাধ্য হয়ে কার্ডে ডলার নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছে। বিদেশ থেকে ডলার আসার চেয়ে যাওয়ার হার বেশি হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ডিসেম্বর মাস হলো ভ্রমণের মৌসুম। এই মাসে মানুষ অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি ভ্রমণ করে।
তাই ডিসেম্বরে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বাড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ২৪৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকরা বিদেশে গিয়ে ৯২৯ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর পাঁচ বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২৭৬ শতাংশের বেশি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে দেশে ও বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে ৪৫ হাজার ৮০ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা নভেম্বরের তুলনায় ৬.৩৫ শতাংশ বেশি। নভেম্বরে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে ডিসেম্বরে কার্ডের মাধ্যমে দেশে ৪৪ হাজার ৪২২ কোটি টাকার লেনদেন হয়। বিদেশে গিয়ে গ্রাহক লেনদেন করে ৯২৯ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ১৬.৪১ শতাংশ। নভেম্বরে ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে গিয়ে ডলার খরচ হয় ৭৯৮ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে ২০২৩ সালে বিদেশে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডে মোট খরচ হয় ৮ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা।

তথ্যমতে, ২০২২ সালের এপ্রিলের আগ পর্যন্ত প্রতিমাসে ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে লেনদেন হয়েছিল ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার মধ্যে। তবে মে মাসে প্রথমবারের মতো লেনদেন হয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এরপর ধারাবাহিকভাবে তা বাড়তে থাকে। আগস্টে ৫২০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। অক্টোবরে গিয়ে তা ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে তা ৭০০ কোটি টাকা ছাড়ায়। একই বছরের অক্টোবরে তা আরও বেড়ে ৮০০ কোটি টাকা হয়।

বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, এই মুহূর্তে কার্ডের মাধ্যমে ডলার লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়াটা খুশির সংবাদ নয়। কারণ আমাদের ডলার ইনফ্লোর চেয়ে আউটফ্লো বেশি। এ ছাড়া ভ্রমণকারীরা কার্ডে ডলার নিয়ে গেলে মুদ্রাটি সহজে ও কম দামে পান জানিয়ে তিনি বলেন, ভ্রমণকারীরা কার্ডে ডলার এনডোর্স করে ভ্রমণ বা চিকিৎসা করাতে যাচ্ছে। এতে আমাদের ডলারের সঞ্চয় কমছে। তিনি বলেন, একদিকে আমরা এলসি খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ডলার পাচ্ছি না। অন্যদিকে ভ্রমণকারীদের চাপ মোটেও সুখকর না। যদি প্রপার চ্যানেলে বিদেশ থেকে ডলার আসতো, তাহলে সংকট সামাল দেয়া যেতো। কিন্তু বিদেশ থেকে আমাদের দেশে ডলার নিয়ে আসা ও খরচ করার উদাহরণ খুবই নগণ্য। এ ছাড়া আমাদের দেশের ডলার ইনকামিং প্যাসেঞ্জার ও বিজনেস ভিজিট একেবারেই কমে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাজারভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা চালু না হলে ডলার সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি দেশি মুদ্রাতেও কার্ডভিত্তিক লেনদেন বেড়েছে। এটিএম, পিওএস, সিআরএম এবং কার্ডের মাধ্যমে ই-কমার্স লেনদেন ডিসেম্বর মাসে ১৬.৪৫ বেড়েছে। সব মিলিয়ে ডিসেম্বরে দেশি ও বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা, যা আগের মাসের তুলনায় ৬.৩৬ শতাংশ বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *