সর্বশেষ
Home » ধর্ম » মালয়েশিয়ায় রমজানের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও মাসটির সম্মানে চলছে অফারের ছড়াছড়ি

মালয়েশিয়ায় রমজানের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও মাসটির সম্মানে চলছে অফারের ছড়াছড়ি

মালয়েশিয়ায় রমজানের বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হলেও মাসটির সম্মানে দেশটির বাজারে চলছে অফারের ছড়াছড়ি। দেশটির জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল মালয় মেইল বলছে, কাজংয়ের সীমান্তে প্রিসেন্ট ১৪ তে অবস্থিত রমজান-এর বাজারে একটি মুর্তাবক স্টলের সামনে ক্রেতাদের লাইন দেওয়ার চিত্র দেখা যায়। সাধারণ সময়ে যেখানে একটি মুর্তাবাকের দাম ৬ থেকে ৭ রিঙ্গিত সেখানে রমজান উপলক্ষ্যে সেখানকার স্টলে মুরগির মুর্তাবাক বিক্রি করছিল মাত্র ৭ রিঙ্গিতে।

দেশটির সচিবালয় পুত্রাজায়ার উদ্যোগে ‘মেনু রহমাহ’ যা বিশেষ বরকতের অংশ হিসাবে ক্রেতাদের দিকে তাকিয়ে সারা রমজান মাস জুড়ে কম দামে বিক্রি করবেন তারা।

স্টলটির মালিক কামারুল হিশাম যার বয়স প্রায় ৪০, তিনি বলছিলেন, যদিও এটি বানাতে খরচ বেশি। তবুও আমি মনে করি যে, আমি যদি এটি কম দামে বিক্রি করি তবে লাভটি আমার কম হবে কিন্তু প্রচুর লোক আমার কাছ থেকে বেশি কিনবে, বলুন, এটা কী আমার ভুল? আর চ্যারিটি হিসেবে রোজার মাসে এটি একটি সওয়াবের কাজ। এটি আমার ‘রিজিকি’ (জীবিকা) কামাই করে নেওয়া আমার উপায়ও বটে।

কামারুল বলছিলেন, কিছু কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও ডিম এবং মশলাদার কাঁচা মাংস দিয়ে ভরা ভাজা ময়দার প্যানকেকের এই মুর্তাবাকগুলো তৈরির সময় তিনি কোনও কিছুতে কম দেননি।

তিনি রমজানের পড়ন্ত বিকেলে মুর্তবাক বিক্রির সময় তার স্টলের সামনে লোকের ভিড় দেখিয়ে বলছিলেন, আপনি দেখছেন না লোকেরা আমার স্টলের সামনে কিভাবে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুর্তাবাক নিবে বলে। আমি খুব খুশি!

প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী দাতুক সেরি সালাহউদ্দিন আইয়ুবের অধীনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মন্ত্রণালয় কর্তৃক চালু করা, মেনু রহমাহ ছিলো একটি ভালো উদ্যোগ। যা মাত্র ৫ রিঙ্গিত দিয়ে কেনা যায় এবং সহজে লাঞ্চ, ডিনার বা ইফতার করা যায়। মেনু রেহমাতে মূলত ভাত, মুরগী বা মাছ, শাকসব্জী এবং খনিজ পানীয়র বোতল থাকে।

দেশটির ৩২ বছর বয়সী ফয়েজ জয়নুদ্দিন বলেছেন যে, তিনি প্রায় এক বছর ধরে সাপ্তাহিক রাতের বাজারে খাবারের বাক্স বিক্রি করছেন। প্রথমে মাংসের স্যুপে ইন্দোনেশিয়ান নুডলস খুব বেশি বিক্রয় হয়নি তার, যার ফলে তিনি ১ রিঙ্গিত কমিয়ে মেনু রাহমা আইটেম হিসাবে বিক্রি করছেন, ফলে সেগুলি সব এখন হিট।

এদিকে বাহারী খাবারের পাশাপাশি মালয় পোশাকের দোকান ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে চলছে সমানতালে রমজানের স্পেশাল অফার।

সারাবছর যেসব পোশাকের দাম থাকে ৩৫ থেকে ৫০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের মধ্যে সেখানে সেসব পোশাকের অফারে মূল্য এখন ১৪ থেকে ২৫ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের মধ্যে।

দেশটির জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস শপি, লাজাডা, জালোরা ও শেইনে মডার্ন বাজু মেলায়ু ও বাজু কুরুংয়ের দাম ১৫.৬৭ রিঙ্গিত মাত্র। যা অন্যসময়ের তুলনায় শতকরা প্রায় ৬৮ শতাংশ কম।

অন্যদিকে ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার চালের বাজারে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মালয়েশিয়া মাদানি স্পেশাল প্রজেক্টের আওতায় সাদা চালের ১০ কেজির প্যাকেট বিক্রয় চালু করেছে মাত্র ৩০ রিঙ্গিতে।

যা দাম গত রমজানের আগে ছিলো ৪৫ থেকে ৫০ রিঙ্গিত।
নিউ স্ট্রেইটস টাইমস তাদের বিজনেস টাইমসে বলেছে, রমজান উপলক্ষ্যে মালয়েশিয়া মাদানি সরকার নির্ধারিত মূল্যে সাদা চাল বিক্রয়ের ফলে দেশটির বাহির থেকে আমদানিকৃত চাল বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছে কেদাহ রাজ্যের চাল ব্যবসায়ীরা।

দেশটির সচিবালয় পুত্রাজায়ায় ‘রাহমা রামাদান’ মার্কেটে একজন জোরে জোরে চিৎকার করছিলেন আর তার স্টলের সামনের ভিড়ের মধ্যে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলছিলেন, অফার, অফার, অফার। তরমুজের রস! তরমুজের রস! দেরী হলে আপনি আর পাবেন না, তাড়াতাড়ি আসুন, শেষ হয়ে যাবে।

এদিকে দেশটির বাণিজ্য ও জীবনযাত্রার খরচ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় লাল পেঁয়াজের বর্তমান গড় মূল্য প্রতি কেজি ৭.৪০ রিঙ্গিত এবং মালয়েশিয়ার রাজ্যগুলোতে এর দাম বর্তমানে কেজি প্রতি ৮.২৫ রিঙ্গিত প্রায়। যার ২০২২ সালে বেজলাইন মূল্যে ছিলো ৩.৯০ রিঙ্গিত, যা তখনকার সময়ের প্রায় দ্বিগুণ।

এই অবস্থা এবং পরিস্থিতিতে কিছু বিক্রেতা ক্রেতাদের মেনু রাহমা অফার করছেন। আর কিছু বিক্রেতারা বলেছেন যে, তারা কম লাভে বেশে ভালো বিক্রি করছেন।

এটাকে দেশটির বাণিজ্য ও জীবনযাত্রার খরচ সংক্রান্ত উপমন্ত্রী ফাউজিয়া বলেছিলেন, রাহমা হচ্ছে বারাকাহ। সরকার রমজান বাজারকে রোজার মাসে মেনু রাহমা দেওয়ার জন্য বাধ্য করেছে যাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ব্যক্তি এবং পরিবারকে ফিন্যান্সিয়াল রিলিফ হিসেবে দেওয়া যায় এবং তার মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগকে সামনে আরো উন্নত করার জন্য এগ্রেসিভ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

মালয়েশিয়ায় রমজানের অফারের এই রাহমা বাজার ও মেন্যুটি সাবেক দেশীয় বাণিজ্য ও জীবনযাত্রার খরচ সংক্রান্ত মন্ত্রী দাতুক সেরি সালাহউদ্দিন আইয়ুব বাস্তবায়ন করেছিলেন। যিনি গত বছরের জুলাই মাসে ইন্তেকাল করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *