অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সারা দেশে আজ থেকে শুরু হবে যৌথ অভিযান। ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ও পরে সারা দেশে বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িতে হামলা এবং অস্ত্র-গোলাবারুদ লুট করে দুর্বৃত্তরা। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক নির্দেশনায় কোনো ব্যক্তির কাছে এ ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ রক্ষিত থাকলে ৩রা সেপ্টেম্বর মঙ্গলবারের মধ্যে তা নিকটস্থ থানায় জমা দেয়ার জন্য বলা হয়। এর পরেও যদি কারও কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায় পুলিশ সদর দপ্তর। সেই হিসেবে আজ থেকে মাঠে নামবে যৌথ বাহিনী।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে সব বাহিনীর সমন্বয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান চলবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে। যৌথ অভিযানে সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী), বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সমন্বয় থাকবে। সব জেলায় সমন্বয় সভা ডাকা হয়েছে। পুলিশ সুপার, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য সদস্যদের সমন্বয়ে কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। সভায় স্থগিতকৃত লাইসেন্সের তালিকা পর্যালোচনা করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনাররা সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় বুধবার থেকে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রণীত স্থগিতকৃত লাইসেন্সধারীদের তালিকা এবং নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত জমাকৃত অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের তালিকা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থায় পাঠাবেন।
পুলিশের সূত্র বলছে, যৌথ অভিযানে জেল পলাতক আসামি ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে জোর দেয়া হবে। এ ছাড়া ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে যারা নির্বিচারে গুলি করে গা ঢাকা দিয়েছেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। গুলি করার অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করার কথাও বলা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য নির্বিচারে গুলি করায় সরাসরি জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে বৈঠক হয়েছে। এতে সব বাহিনী ও গোয়েন্দাপ্রধান এবং তাদের প্রতিনিধিরা ছিলেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সারা দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩১০টি। এরমধ্যে ব্যক্তিগত অস্ত্র ৪৫ হাজার ২২৬টি। এসব অস্ত্রের মধ্যে পিস্তল ৪ হাজার ৬৮৩টি, রিভলবার ২ হাজার ৪৩টি, একনলা বন্দুক ২০ হাজার ৮০৯টি, দোনলা বন্দুক ১০ হাজার ৭১৯টি, শটগান ৫ হাজার ৪৪৪টি, রাইফেল ১ হাজার ৭০৬টি এবং অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে ৪ হাজার ৬টি। বাকি অস্ত্রগুলো বিভিন্ন আর্থিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে লাইসেন্স করা। প্রাপ্ত হিসাব বলছে, এসব অস্ত্রের মধ্যে ১০ হাজার ২১৫টি রয়েছে রাজনীতিবিদদের কাছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে রয়েছে ৭ হাজার ২১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র। বিএনপি’র নেতাকর্মীর কাছে ২ হাজার ৫৮৭টি এবং অন্যান্য দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির নামে ৭৯টি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।
২৫শে আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি থেকে গত ৫ই আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক লোকজনকে দেয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। ওই সময়ে যাদের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে, তাদের ৩রা সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, অস্ত্র-গোলাবারুদ জমা দেয়ার শেষ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে।