প্রথমবারের মতো মুদ্রা অদলবদল বা সোয়াপ ব্যবস্থা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরফলে এখন থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে ডলারের সঙ্গে টাকার অদলবদল করতে পারবে। সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য টাকা-ডলার অদলবদলের এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এর মাধ্যমে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম অনুযায়ী, ডলার নিয়ে ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিতে পারবে বাংলাদেশ। বর্তমানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলার বিক্রির দর (স্পট রেট) হলো ১১০ টাকা। পুনরায় টাকা পরিশোধ করে সমপরিমাণ ডলার নিতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এক্ষেত্রে বিনিময় হার নির্ধারিত হবে টাকা নেয়ার দিনে থাকা ডলারের দর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাকে ‘স্পট রেট’ বলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে উদ্বৃত্ত ডলার থাকলে এখন তা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে তারা সমপরিমাণ টাকা ধার নিতে পারবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক উভয় পক্ষই লাভবান হবে।
এদিকে ব্যাংকগুলো যখন তাদের ডলার ফেরত নেবে, তাদেরকে টাকায় সুদ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সুদহার হবে সোফর রেট এবং রেপো রেটের মধ্যে পার্থক্য।
বর্তমানে ‘সোফর’ (সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট) সুদহার ৫.৩ শতাংশ, আর রেপো সুদহার হলো ৮ শতাংশ। এখানে পার্থক্য হচ্ছে ২.৭ শতাংশ।
মুদ্রা অদলবদলের জন্য বার্ষিক এই হারে সুদ দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে। শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের জন্য মুনাফার হার ঠিক হবে শরিয়াহ অনুযায়ী।
বর্তমানে ব্যাংকগুলো ৮ শতাংশ বার্ষিক সুদহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থেকে অর্থ ধার করে। কিন্তু, তারা মুদ্রা অদলবদলের ক্ষেত্রে বার্ষিক ২.৭ শতাংশ হারে সুদ দেবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, এ পদ্ধতিতে ব্যাংকগুলোর তাৎক্ষণিক টাকা নেয়ার সুযোগ হবে। এতে তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকগুলোকে অন্য ব্যাংকের উপর নির্ভরশীলতা কমে যাবে। তহবিল ব্যবস্থাপনার খরচও কমবে। সর্বনিম্ন ৫০ লাখ বৈদেশিক মুদ্রা বা সমপরিমাণ টাকা “কারেন্সি সোয়াপ” এ অদল বদল করা যাবে।
বর্তমানে একটি ব্যাংক চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করে টাকা নিতে পারে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার নিতে পারবে- এমন বাধ্যবাধকতা নেই। নতুন এ ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট সময় পরে সেই ডলার ফেরত নিতে পারবে-এমন নিশ্চয়তা দেয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতিতে ব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও লাভবান হবে। ব্যাংকগুলোর দেয়া ডলার রিজার্ভে যোগ হলে তা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। আর ব্যাংকগুলো তার চাহিদার সময়ে ডলার নিতে পারবে।
বতর্মানে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে এ পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করতে পারে। আবার ডলার ধারও নিতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডলার ফেরত দিতে না পারলে সুদ পরিশোধ করে মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়। সময় বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ ‘কারেন্সি সোয়াপ’ পদ্ধতিতেও রাখা হয়েছে।
মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বাজার থেকে ডলার তুলে নেয়। আবার প্রয়োজনে বিক্রিও করে।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে এখন শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক ।