সর্বশেষ
Home » অন্যান্য » আঙ্গুর, আপেল, মাল্টায় কেজিতে দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত

আঙ্গুর, আপেল, মাল্টায় কেজিতে দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত

রমজান ও ইফতারকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর খেজুরসহ আমদানিকৃত ফলের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায় বাজারে। এ বছরও খেজুরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আমদানিকৃত বিদেশি  ফল আঙ্গুর, আপেল, মাল্টাসহ কমলার দাম। সরজমিন রাজধানীর কাজীপাড়া ও কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত রমজান থেকে এক বছরে কেজিতে মাল্টার দাম বেড়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া আঙ্গুুরের কেজিতে ৮০ টাকা ও লাল আপেলে ৫০ টাকা পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হিসাবে বছর ঘুরতে মাল্টার দাম ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকট, সরকারি ট্যাক্স, সঠিক সময়ে দেশে পণ্য না আসায় ফলের দাম বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতি বছরে রমজানে আমদানিকৃত ফলে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেন। বাড়তি মূল্যের কারণে ইফতারে ফল কিনে খাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন ভোক্তাসাধারণ। কাজীপাড়া ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি মাল্টা ৩২০ টাকা, সবুজ আঙ্গুর ৩৬০ টাকা, কালো আঙুর ৩৮০ টাকা, ফুজি আপেল ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আফ্রিকান জাতের লাল আপেল ৩৫০ টাকা, সবুজ আপেল ৩২০ টাকা ও চায়না ফুজি আপেল ৩০০ টাকা কেজি। 

গত রমজানে প্রতি কেজি মাল্টা ২২০ টাকা, সবুজ আপেল ৩০০ টাকা, লাল আপেল ৩০০ টাকা, ফুজি আপেল ২৬০, সবুজ আঙ্গুুর ২৮০ টাকা, কালো আঙ্গুুর ৩৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এক বছরে মাল্টার দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। আফ্রিকান জাতের লাল আপেলের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা, সবুজ আপেলে ২০ টাকা ও ফুজি আপেলে ৪০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া সবুজ আঙ্গুরের দাম বেড়েছে ৮০ টাকা। এই হিসেবে গত বছরের তুলনায় এ বছরে রমজানে মাল্টার দাম বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ, সবুজ আঙ্গুরে প্রায় ২৯ শতাংশ ও লাল আপেলে ১৭ ও ফুজি আপেলে ১৫ শতাংশ দাম বেড়েছে। কাজীপাড়া ফল বাজারে এসেছেন শামসুল আলম। আঙ্গুরের দাম জিজ্ঞেস করেন তিনি। দরদামের এক পর্যায়ে তিনি মানবজমিনকে বলেন, দুইদিন আগেও আমি এই আঙ্গুর ২২০ টাকা করে কিনেছি। সেটা উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর থেকে, আরও ভিআইপি এলাকা। ওরা এখন বলছে ২৮০ টাকা। গত রমজানে যেমন ছোলা ছিল ৯০ টাকা, এই রমজানে ১২০ টাকা। মাল্টার দামও অনেক বেশি। এই আপেল ছিল ১৮০/১৯০ টাকা। এখন ৩২০ টাকা বলছে। আগে যদি মানুষ ফল কিনতো দুই কেজি এখন কিনবে এক কেজি। এক মন্ত্রী বলেছেন- খেজুর না খেয়ে বরই খেতে। 

আল্লাহ্‌ যেভাবে সাধ্য দিয়েছে এখন সেইভাবেই খাবো। ফল ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ও আল-আমিন বলেন, দুই থেকে তিনদিন আগেও মাল্টার দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। আজকে ৩২০ টাকায় বিক্রি করছি। ৩ দিনের ব্যবধানে ৪০ টাকা বেড়েছে। মার্কেটের এই মাথা থেকে ওই মাথায় গেলে যে পণ্যের দাম ৪ হাজার টাকা বলছে সেটা ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। এভাবে দাম বাড়ে। আমরা যে দামে কিনি তার থেকে ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করি।  কাওরান বাজারে দেখা যায়, মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে। ফুজি আপেল ২৭০ টাকা, সবুজ আপেল ৩০০ টাকা কেজি। আঙ্গুর ২৬০ টাকা ও কালো আঙ্গুর ৩৬০ টাকা কেজি। এ ছাড়া কমলা ২২০ টাকা, আনার ৩০০ টাকা, স্ট্রবেরি ৪৫০ টাকা, মানভেদে বরই ৮০/১০০/১২০ টাকা, পেয়ারা ৮০/৯০/১০০ টাকা ও পেঁপে ৮০ টাকা কেজি, তরমুজ ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রয় হচ্ছে। 

এই বাজারের ফল ব্যবসায়ী মামুন হোসেন বলেন, প্রতিবার রমজানের আগে ফলের দোকানে মানুষের ভিড় বেড়ে যায়। এ বছর পণ্যের দাম অনেক বেশি। সেভাবে কেউ-ই আসছে না। এক কেজি মালটা যদি হয় ৩০০ টাকা; ক’জনের ৩০০ টাকা দিয়ে কেনার ক্ষমতা আছে। গত বছর রমজানে এককেজি মালটা ২৩০ টাকায় বিক্রি করছি। সবুজ আপেল ছিল ২৬০/২৭০ টাকা কেজি। ফুজি আপেল ২৪০ টাকায় বিক্রি করছি। এককেজি করে মালটা আর আপেল কিনতেই ৬০০ টাকা লাগে। আঙ্গুর বিক্রি হয়েছে ২৩০ টাকায়। অনেকেই কিনতে পারছে না। প্রতিটি ফলের দামই বাড়তি। এদিকে সোমবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে শিল্পমন্ত্রীর একটি বক্তব্যে দেশজুড়ে এখন আলোচনায়। তিনি রমজান উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বরই দিয়ে ইফতার করেন না কেন? আঙ্গুুর লাগবে কেন, আপেল লাগবে কেন? আর কিছু নাই আমাদের দেশে। 

পেয়ারা দেন না, সবকিছু দেন। প্লেটটা (ইফতারির) ওইভাবে সাজান। ঢাকা মহানগর ফল আমদানি- রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, জাহাজগুলো যে চ্যানেল দিয়ে আমাদের দেশে আসতো সেগুলো ঢুকতে পারছে না। তাই ফিরে যাচ্ছে। আগে যে জাহাজ আসতে ২৫ দিন লাগতো এখন আফ্রিকা দিয়ে ঘুরে আসতে ৭২ দিন লাগছে। এ ছাড়া ডলার মূল্য ও সরকারি ট্যাক্স বেড়ে গেছে। এজন্য আমদানিকৃত ফলের দাম বেড়ে গেছে। কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, প্রতি বছরে রমজানে আমদানিকৃত ফলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। ব্যবসায়ীরা চিন্তা করেন এটা মুনাফার মৌসুম। তারা সবসময় সরকারি ডিউটি, ডলারের দাম বাড়ার কথা বলে দাম বাড়িয়ে দেন। এটা রোজা শুরু হলে আরও বাড়বে। তিনি বলেন, যারা বাজার তদারকি করেন তাদের বের করা উচিত আন্তর্জাতিক বাজারে এই পণ্যের দাম কত। এখন তেল ও গমের দাম অর্ধেক কমে গেছে। একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যে খেজুরের দাম অনেক কমিয়েছে। সেখানে তো পরিবহন খরচ বেশি পড়েনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *